আমুদরিয়া নিউজ : তাঁর নাম, মড স্টিভেন্স ওয়াগনার (১৮৭৭–১৯৬১) আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী ট্যাটু শিল্পী হিসেবে পরিচয় পান। তবে তাঁর এই সুনামের পেছনে তাঁর স্বামীর অবদানও অনস্বীকার্য।
মডের জন্ম কানসাসের এম্পোরিয়া শহরে। তিনি একজন সার্কাস পারফর্মার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন — ছিলেন এরিয়ালিস্ট ও কনটরশনিস্ট। তবে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯০৪ সালে, যখন সেন্ট লুইস ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে গাস ওয়াগনার নামের এক জনপ্রিয় ট্যাটু শিল্পীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
গাস ছিলেন একজন আত্মপ্রচারক শিল্পী, যার শরীর জুড়ে ট্যাটুর শিল্প ছিল। গাস প্রথম সাক্ষাতে মডকে বলেছিলেন, তিনি আমেরিকার সবচেয়ে শৈল্পিক চিহ্ন-খচিত বলে পরিচিত। মড তাঁর কাছে ট্যাটু শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গাস রাজি হন, তবে একটি শর্তে — তাঁকে ডেট করতে হবে। এই চুক্তি থেকেই শুরু হয় তাঁদের প্রেম ও শিল্পের যৌথ যাত্রা। পরবর্তীতে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং একমাত্র কন্যা লোটেভার জন্ম হয়।
মড এবং গাস দু’জনেই আধুনিক ট্যাটু মেশিন না ব্যবহার করে “স্টিক অ্যান্ড পোক” নামে পরিচিত হাতে ট্যাটু আঁকার কৌশল ব্যবহার করতেন। এই পদ্ধতিতে ধৈর্য্য লাগতো বিস্তর। কারণ, কোনও মেশিন ছাড়াই সাধারণ ছুঁচের সাহায্যে এই কাজটি করতে হত।
গাসের কাছ থেকে শেখা এই কৌশলে মড অদ্বিতীয় দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর শরীরজুড়ে ছিল ঈগল, ঘোড়া, সাপ, প্রজাপতি, নারীচিত্রসহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী চিত্র, যা তৎকালীন আমেরিকান ট্যাটু সংস্কৃতির প্রতিফলন। তবে হয়তো সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল তার বুকে অঙ্কিত ছবিটি। সেটিতে দুটি সিংহের মাঝে একটি মহিলার ছবি আঁকা আছে। উইকিপিডিয়ায় এই ছবিটি ভালোভাবে দেখতে পারবেন।
তাঁরা দেশজুড়ে ভ্রমণ করে বিভিন্ন ভাউডেভিল শো, মেলা, এবং সার্কাসে ট্যাটু আঁকা ও প্রদর্শনের কাজ করতেন। ট্যাটু শিল্পের প্রসারে তাঁরা অসামান্য ভূমিকা নেন। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আমেরিকার অন্তর্দেশীয় অঞ্চলে ট্যাটুর প্রচার ঘটে তাঁদের হাত ধরে। কন্যা লোটেভাও ট্যাটু শিল্পে প্রশিক্ষণ নেন, তবে মায়ের অনুরোধে নিজের শরীরে কোনো ট্যাটু করাননি।
মড ওয়াগনার ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ওকলাহোমার লটনে প্রয়াত হন। তাঁর জীবন শুধুই এক নারী শিল্পীর ইতিহাস নয়। বরং এক সংগ্রামী নারীর কাহিনিও বটে। ট্যাটু শিল্পীর ক্ষমতাবলে তিনি পুরুষশাসিত সমাজেও নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন।
আজও, মড ওয়াগনারের নাম উচ্চারিত হয় সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। তিনি একজন সেই সাহসী নারী, যিনি নিজের শরীর এবং শিল্পকে আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর অবদান ভবিষ্যতের নারী শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।