আমুদরিয়া নিউজ : পোপ জোয়ান—একটি নাম, যা ক্যাথলিক ইতিহাসে বিতর্ক এবং রহস্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মধ্যযুগীয় ইউরোপে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, পোপ জোয়ান ছিলেন একজন নারী যিনি পুরুষ বেশে ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শিতা অর্জন করে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ পদ, অর্থাৎ পোপের আসনে অধিষ্ঠিত হন।
এই কিংবদন্তিটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৩শ শতকের সময়ে। ডমিনিকান পুরোহিত জঁ দে মেইলি তাঁর ‘ক্রনিকন পন্টিফিকাম এট ইম্পেরেটোরাম’ গ্রন্থে প্রথম এই কাহিনির উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে এটি আরও বিস্তার লাভ করে এবং বহু ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত ও আলোচিত হয়।
গল্প অনুযায়ী, জোয়ান জন্মগ্রহণ করেন ইংল্যান্ডে অথবা জার্মানিতে এবং গ্রিসে পড়াশোনা করেন। একজন পুরুষের ছদ্মবেশে তিনি “জন অ্যাঙ্গেলিকাস” নামে পরিচিত হন। চার্চে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ও ধর্মীয় নিষ্ঠার জন্য ধীরে ধীরে তিনি উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হন এবং শেষ পর্যন্ত পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন।
তবে কিংবদন্তির সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশ হলো তাঁর পরিচয় ফাঁস হওয়া। বলা হয়, একটি ধর্মীয় মিছিলের সময় তিনি জনসাধারণের সামনেই সন্তান প্রসব করেন, ফলে তাঁর প্রকৃত নারী পরিচয় প্রকাশ পায়। এই ঘটনার পর তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে—কিছু তথ্যে বলা হয় তিনি জনরোষে নিহত হন, আবার কিছু বিবরণে তিনি বন্দি অবস্থায় মারা যান।
তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই কাহিনিকে কিংবদন্তি বলেই মনে করেন। তাঁদের মতে, ক্যাথলিক চার্চের কোনো আনুষ্ঠানিক নথিতে পোপ জোয়ানের অস্তিত্বের প্রমাণ নেই। অনেক ইতিহাসবিদ ধারণা করেন, এটি ছিল চার্চবিরোধীদের রচিত একটি ব্যঙ্গাত্মক কাহিনি, যার মাধ্যমে চার্চের পুরুষতান্ত্রিকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
তবুও, এই কাহিনির সাংস্কৃতিক প্রভাব অনস্বীকার্য। পোপ জোয়ান চরিত্রকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য উপন্যাস, তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। ডোনা উলফোলকের “Pope Joan” নামক জনপ্রিয় উপন্যাসটি আধুনিক পাঠকদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি করে। ২০০৯ সালে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।
পোপ জোয়ানের কাহিনি কেবল একটি ঐতিহাসিক রহস্য নয়, বরং এটি এক সামাজিক প্রতিচ্ছবিও বটে। এটি প্রশ্ন তোলে—একজন নারী কি শুধুমাত্র লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন?
চলমান নারীবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পোপ জোয়ান আজও আলোচনায় থাকেন। তাঁর কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাসে লুকিয়ে থাকা কাহিনিগুলোর মধ্যেই হয়তো অনেক সত্য রয়ে গেছে, যা সময়ের সঙ্গে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।