আমুদরিয়া নিউজ : প্রয়াত হলেন উরুগুয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসে মুহিকা। লাতিন আমেরিকার অন্যতম প্রগতিশীল ও বিতর্কিত নেতার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত তার মৃত্যুর সঠিক কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
একজন সাধারণ কৃষক, গেরিলা যোদ্ধা, এবং শেষে রাষ্ট্রনায়ক। হোসে মুহিকার জীবন বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতার আসল অর্থ কী। তার মৃত্যু শুধু উরুগুয়ে নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক যুগের অবসান। মুহিকার মৃত্যুতে উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি শোক জানিয়ে লিখেছেন, ‘আপনার দেওয়া শিক্ষা ও ভালোবাসা আমাদের প্রেরণা।’
মুহিকা রাজনীতি থেকে ২০২০ সালে অবসর ননেন। তাঁর আদর্শ উরুগুয়ের রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে এখনও। শেষ জীবনে ক্যান্সারে ভুগলেও তিনি মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যু জীবনে নুনের মতোই অনিবার্য।
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে সময়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি পান। কারণ, রাষ্ট্রপ্রধানের বিলাসবহুল জীবন বর্জন করেছিলেন তিনি। স্ত্রী লুসিয়া টোপোলানস্কির সঙ্গে একটি সাধারণ বাড়িতে থাকতেন তিনি। ১৯৮৭ সালের পুরনো গাড়ি চড়তেন। প্রেসিডেন্টের বেতনের বড় অংশ দান করে দিতেন। তাদের কোনো গৃহকর্মী বা নিরাপত্তা বাহিনীও ছিল না। তাঁর এই জীবনযাপন তাঁকে বিশ্বজুড়ে সম্মান ও কৌতূহলের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল। তিনি অবশ্য বলতেন, আমি গরিব নই। তাঁর মতে আসল গরিব হল তাঁরা, যাঁরা অন্তহীন লোভের পিছে ছোটে।
মুহিকার জীবন ছিল সংগ্রাম ও পরিবর্তনের ইতিহাস। যুবক বয়সে তিনি গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের সদস্য ছিলেন। জেলবন্দি হন। জেল মুক্তির কয়েক বছর পর, তিনি দেশের নিম্নকক্ষ, প্রতিনিধি পরিষদ এবং উচ্চ কক্ষে সিনেটে আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি উরুগুয়ের বামপন্থী জোট সরকারের মন্ত্রী হন। এরপর ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে উরুগুয়ে লাতিন আমেরিকায় অনেক প্রগতিশীল ঘটনাবলীর সাক্ষী হয়।
তিনি দেশ চালাতে গিয়ে সাহসী ও বাস্তববাদী নানা সিদ্ধান্ত নেন। যেমন, গাঁজা বৈধকরণ, সমলিঙ্গ বিয়ের স্বীকৃতি এবং গর্ভপাতের অধিকার চালু হয় তাঁর আমলেই। তার শাসনকালে অর্থনৈতিকভাবে দেশ বার্ষিক ৫.৪% হারে বৃদ্ধি পায়। কমে বেকারত্ব। রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার আগে তিনি একবার বলেছিলেন, সারা দুনিয়া কি নিয়ে এত ভাবছে! আমার তো সামান্য কিছু দিয়েই চলে যায়। ছোট বাড়িতে থাকি। পুরনো গাড়ি চালাই। কোনও কাজের লোক রাখি না। নিজেরাই নিজেদের সব কাজ করি। তা হলে এই পৃথিবী কি নিয়ে ছোটাছুটি করে, কীসের জন্য এত পাগলামো করে!
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।