আমুদরিয়া নিউজ : শীতের শুরু। ত্বকের সমস্যার শুরু। শহরের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে এখন যেন ভিড় বাড়ছে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া নিয়ে। কারো ত্বক ফাটা, চুলকানি, খুসকির সমস্যা এবং অ্যালার্জি হচ্ছে।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা কমে। ফলে ত্বকের উপর প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি।
কেন শীতে ত্বক এত বেশি খারাপ হয়?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কমে যায়। তাতে ত্বক তার প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারায়। তার উপরে বাড়িতে হিটার ব্যবহার, অতিরিক্ত গরম জলে স্নান,সূর্যের আলো কম পাওয়ার ব্যাপার আছে।
বাইরে ঠান্ডা হাওয়া ও ভিতরে গরম পরিবেশ— এই সমস্ত কারণে ত্বকের আর্দ্রতা দ্রুত কমে যায়। তাই ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক, ফাটলধরা ও টানটান হয়ে পড়ে। অনেকের গায়ে দেখা দেয় র্যাশ, চুলকানি বা একজিমার মতো সমস্যা।
শীতকালে ত্বক ভালো রাখার উপায়—বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
১. প্রতিদিন নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার-
স্নান করার সঙ্গে সঙ্গেই হালকা ভেজা ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগালে তা ত্বকের ভেতর আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম খুব ময়শ্চারাইজার আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল, সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সুগন্ধিহীন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
২. গরম জলে স্নান কম-
অনেকেই শীতে খুব গরম জলে স্নান করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই অভ্যাস ত্বকের প্রাকৃতিক তেলকে নষ্ট করে দেয়। তাই হালকা গরম বা লুকোওয়ার্ম জলে স্নান করুন। স্নানের সময় খুব বেশি হলে ত্বকের শুষ্কতা অনেকটাই কমতে পারে।
৩. দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খান।
শীতে তেষ্টা কম লাগে, ফলে অনেকেই জল কম খান। ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে দিনে ৬–৮ গ্লাস জল অবশ্যই পান করা উচিত। পর্যাপ্ত জল শরীরের টক্সিন বের করতে এবং ত্বক নরম ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
৪. ঠোঁট, হাত ও পায়ের বিশেষ যত্ন-
শীতকালে ঠোঁট ও হাত-পা সবচেয়ে বেশি ফাটে। ঠোঁটে নিয়মিত লিপবাম, হাতে পুরু ক্রিম বা ভ্যাসলিন,পায়ে রাতে ঘুমানোর আগে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে মোজা পরে নিলে ভালো ফল পাবেন।
৫. শীতে ‘সানস্ক্রিন’ ব্যবহার –
অনেকেই মনে করেন শীতে রোদ কম, তাই সানস্ক্রিন লাগানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু শীতে UV রশ্মি কমে না; ত্বক একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৬. খাবারে বাড়ান ভিটামিন–ই
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে খাবারের মাধ্যমেও ত্বক ভালো রাখা সম্ভব। আমন্ড, আখরোট, বীজজাতীয় খাবার, ভিটামিন–ই সমৃদ্ধ খাদ্য,সবুজ শাকসবজি ও ফল
এসব ত্বকের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৭. ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখা-
যাদের ত্বক খুব শুষ্ক, তারা ঘরে ‘হিউমিডিফায়ার’ ব্যবহার করতে পারেন। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ত্বক শুকিয়ে যায় না।
৮. খুসকির সমস্যা –
শীতে মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে খুসকি বাড়ে। অনেক সময় এটি সেবোরিক ডার্মাটাইটিসে পরিণত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে চুল পড়া পর্যন্ত হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা বাড়ায় মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে সঠিক ত্বক–চর্চা করলে ৮০ শতাংশ ত্বক–সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অর্থাৎ, শীত যতই বাড়ুক, সঠিক যত্ন, নিয়মিততা এবং কিছু সহজ অভ্যাসেই এই সময় ত্বককে রাখা যাবে স্বাভাবিক, নরম, মসৃণ এবং উজ্জ্বল।