আমুদরিয়া নিউজ : গত পাঁচ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক বড়সড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক আমেদাবাদের দুর্ঘটনা সেই ঘটনাগুলিই যেন আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। যাত্রীবাহী বিমান হঠাৎ ভেঙে পড়েছে, কিছু নামার সময় ব্যর্থ হয়েছে, কোথাও আবার আবহাওয়া বা যান্ত্রিক ত্রুটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেমন, আমেদাবাদের বিমানটি তুলনামূলকভাবে কম গতিতে টেক অফ করেছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের সন্দেহ, বিমানের ডানায় পাখির ধাক্কায় এর ইঞ্জিন বা লিফট সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল। যার ফলে বিমানটি প্রয়োজনীয় দ্রুততা হয়তো অর্জন করতে পারেনি। তার বাইরে অন্য কোনও কারণ হতে পারে যা আঁচ করা যাচ্ছে না। কারণ একদিন জানা যাবে। আপাতত এটা বলা যায়, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এই ঘটনার কথা মনে করায় অতীতে কিছু বিমান দুর্ঘটনার কথা। তার এক নম্বরে মনে পড়বে—

১) ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উঠেছিল শ্রিজয়ায়া এয়ারের একটি বোয়িং ৭৩৭। যাত্রাটি ছিল মাত্র ৯০ মিনিটের, গন্তব্য ছিল বোর্নিও দ্বীপ। কিন্তু আকাশে ওঠার মাত্র চার মিনিট পরেই বিমানটি আচমকা উচ্চতা হারিয়ে জাভা সাগরে ভেঙে পড়ে। বিমানে ৬২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। কেউই বাঁচেননি। সাগরের গভীর তলদেশ থেকে বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করে তদন্ত শুরু হয়, কিন্তু এখনও দুর্ঘটনার পুরো কারণ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

২) ২০২২ সালের ২১ মার্চ চিনের গুয়াংজি প্রদেশে ঘটে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা। চায়না ইস্টার্ন এয়ালাইন্সের বোয়িং ৭৩৭–৮০০ বিমানটি কুনমিং থেকে গুয়াংজু যাচ্ছিল। মাঝ আকাশে হঠাৎ করে ২৯ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে সোজা নিচে পড়ে যায় বিমানটি। পাহাড়ে ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। এটি ছিল চিনের গত এক দশকের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা।

৩) ২০২২ সালের ৩০ মে নেপালের পোখরা শহরের কাছে একটি ছোট বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। ‘তারা এয়ার’-এর ডিএইচসি–৬ টুইন অটার মডেলের বিমানটি জোমসোম যাওয়ার পথে দিক হারিয়ে পাহাড়ি এলাকায় ভেঙে পড়ে। বিমানে ২২ জন যাত্রী ছিলেন, কেউই বাঁচেননি। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজে ব্যাপক সমস্যা হয়, কারণ দুর্ঘটনাস্থল ছিল একেবারে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।

৪) ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি আবারও নেপালেই ঘটে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ইয়েতি এয়ালাইন্সের এটিআর–৭২ মডেলের বিমানটি নতুন পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় ভারসাম্য হারিয়ে নদীর ধারে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে ছিলেন ৭২ জন। কেউই প্রাণে বাঁচেননি। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করে, যা পরে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে যায়।

৫) ২০২৪ সালের ৯ অগস্ট ব্রাজিলে ঘটে আরেকটি দুর্ঘটনা। ভোপাস এভিয়েশনের এটিআর–৭২–৫০০ বিমানটি শীতল আবহাওয়ায় বরফ জমে গিয়েছিল। এর ফলে বিমানের ইঞ্জিন সঠিকভাবে কাজ না করায়, সেটি হাওয়ায় ঘুরতে ঘুরতে ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা ৬২ জনের কারোরই প্রাণ রক্ষা হয়নি।

৬) ২০১০ সালের ২২ মে, দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ৮১২ রানওয়ে ছাড়িয়ে গিয়ে ধাক্কা খায় ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের কাছে। তৎক্ষণাৎ বিমানে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৫৮ জন যাত্রীর।

৭) ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন টরন্টো থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২, যা কনিষ্ক নামেও পরিচিত ছিল, সেটি মাঝ আকাশেই বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হলে ৩২৯ জন মারা যায়। ৮০টি শিশুও বিমানে ছিল।

৮) ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি, মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার দু’মিনিট পরেই আরব সাগরে ভেঙে পড়ে একটি দুবাইগামী বিমান। ২১৩ জন যাত্রীই মারা যান।

৯) ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট সুইজারল্যান্ডের মন্ট ব্ল্যাঙ্ক পর্বতে ধাক্কা মারে। নিহত হন বিমানের ১১৭ জন যাত্রী ও কর্মী। ওই বিমানে ছিলেন ভারতের পারমাণবিক গবেষণার জনক হোমি জাহাঙ্গির ভাবাও।

১০) ১৯৫০ সালের নভেম্বরে মন্ট ব্ল্যাঙ্কে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ২৪৫। এতে প্রাণ হারান বিমানে থাকা ৪৮ জন।
এই দুর্ঘটনাগুলির মূল কারণ ছিল কোথাও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, কোথাও প্রযুক্তিগত ত্রুটি, আবার কোথাও ভুল পাইলটিং। এক একটি দুর্ঘটনা শুধু নিরীহ যাত্রীদের জীবন কেড়ে নেয়নি। বরং প্রমাণ করেছে, আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও আকাশপথ এখনও হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থাগুলির উচিত আরও বেশি সচেতনতা ও নিয়ম মানা। ভবিষ্যতে যাতে এমন দুঃসংবাদ আর না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখাই কাম্য।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।