আমুদরিয়া নিউজ : ভারতে এমন অনেক নারী আছেন, যাঁদের সৌন্দর্যের কথা সবাই জানে। কিন্তু সৌন্দর্যই সব নয়—এঁদের আসল শক্তি মেধা, পরিশ্রম আর সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ছ’জন দারুণ ব্যক্তিত্বের কথা, যাঁরা প্রমাণ করেছেন সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তা একসাথে থাকলে ম্যাজিক তৈরি হয়!
১. নীতা আম্বানি – ব্যবসা আর সমাজসেবার মেলবন্ধন
নীতা আম্বানি মুম্বাইয়ের নরসী মঞ্জি কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন পেশাদারভাবে প্রশিক্ষিত ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী এবং শৈশব শিক্ষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারপারসন হলেও নীতা আম্বানি শুধু ব্যবসায়ী নন। স্কুল গড়ে তোলা থেকে শুরু করে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলায় অসাধারণ কাজ করেছেন তিনি। একদিকে গ্রেস, অন্যদিকে লিডারশিপ—দুটো মিলিয়ে তিনি আজকের প্রজন্মের কাছে এক রোল মডেল।
২. ঐশ্বর্য রাই বচ্চন – বিশ্বসুন্দরী থেকে মানবিক দূত
ঐশ্বর্য জয় হিন্দ কলেজে এক বছর ইন্টারমিডিয়েট পড়াশোনা করেন। তারপর মাতুঙ্গার ডি. জি. রূপারেল কলেজে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিক (স্কুল) সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
১৯৯৪-এ মিস ওয়ার্ল্ড জেতার পর থেকেই ঐশ্বর্যর নাম জুড়ে গেছে সৌন্দর্য আর স্টাইলের সঙ্গে। কিন্তু তিনি শুধু সুন্দর নন—শিশু ও মহিলাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন ইউনিসেফের মতো সংগঠনের সঙ্গে। পর্দায় যেমন অসাধারণ অভিনয় করেছেন, সমাজের জন্যও তেমনি এক বড় ভূমিকা পালন করছেন।
৩. নাতাশা পুণাওয়ালা – গ্ল্যামারাস, আবার হেলথ ইনোভেটর
নাতাশা পুনাওয়ালা সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে সাংগঠনিক আচরণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এম.এসসি.) অর্জন করেছেন। তার শিক্ষাগত পটভূমি সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক এবং ভিল্লু পুনাওয়ালা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে তার ভূমিকার সাথে পরিপূর্ণ।
ফ্যাশনের জগতে সুপারস্টার নাতাশা পুণাওয়ালা। কিন্তু শুধু ফ্যাশনই নয়, সেরাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও তিনি আলোচিত। কোভিডের সময় ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভারতকে এগিয়ে নিতে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ফ্যাশন সেন্স আর প্রখর মেধা—দুটোই সমানভাবে সামলান তিনি।
৪. সানিয়া মির্জা – টেনিস কোর্টের নায়িকা, সমাজের কণ্ঠস্বর
সানিয়া মির্জা হায়দ্রাবাদের সেন্ট মেরি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ের ডক্টর এম.জি.আর. এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ লেটারস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি কলেজ ডিগ্রি অর্জনের আগে হায়দ্রাবাদের নাসর স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
ভারতের সবচেয়ে সফল টেনিস খেলোয়াড়দের একজন সানিয়া মির্জা। তাঁর রাকেট যেমন সাফল্যের গল্প লিখেছে, তেমনি তাঁর কণ্ঠ নারীর স্বাধীনতা ও সমতার লড়াইকে শক্তি দিয়েছে। আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক আর অনুপ্রেরণাদায়ক—সানিয়া একেবারে নতুন প্রজন্মের হিরো।
৫. দিব্যা খোসলা কুমার – সৃজনশীলতা আর ব্যবসার মেলবন্ধন
দিব্যা খোসলা কুমার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের জানকি দেবী মেমোরিয়াল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক (বি.কম) সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বি.কম সম্পন্ন করার পর, তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে তার ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য সিনেমাটোগ্রাফি এবং সম্পাদনার কোর্সও গ্রহণ করেন।
পরিচালক, অভিনেত্রী, প্রযোজক—সব ভূমিকায়ই দিব্যা খোসলা কুমার সফল। টি-সিরিজের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে তিনি দেখিয়েছেন শিল্প আর ব্যবসা কীভাবে পাশাপাশি চলে। নিজের প্যাশনকে কেরিয়ারে রূপ দিতে চান যারা, তাঁদের কাছে দিব্যা এক নিখুঁত উদাহরণ।
৬. শ্রদ্ধা কাপুর – নতুন প্রজন্মের ভয়েস
শ্রদ্ধা কাপুর জামনাবাই নার্সি স্কুল এবং আমেরিকান স্কুল অফ বোম্বেতে তার স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান এবং থিয়েটার পড়ার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু তিন পট্টিতে অভিনয়ের পর বলিউডে অভিনয়ের জন্য প্রথম বর্ষেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
তার প্রাথমিক শিক্ষা জামনাবাই নার্সি স্কুল। মুম্বাইয়ের জুহুতে। এরপর তিনি আমেরিকান স্কুল অফ বোম্বে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি অন্যান্য বলিউড তারকাদের সহপাঠী ছিলেন। এরপর উচ্চশিক্ষা বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকায়। তিনি প্রথমে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে থিয়েটারও অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি অভিনয়ে আত্মপ্রকাশের জন্য প্রথম বর্ষের পড়াশোনা ছেড়ে দেন।এরপর আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর তিনি ভারতে অভিনয় এবং নির্দেশনা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গানের প্রতি তার আগ্রহ শৈশব থেকেই গড়ে ওঠে ধ্রুপদী গায়িকা মা এবং দাদুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।
শ্রদ্ধা কাপুর শুধু পর্দায় নায়িকা নন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন। পরিবেশ রক্ষা, প্রাণীর অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য—এসব নিয়ে তাঁর সরব উপস্থিতি তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। সহজ-সরল স্বভাব আর দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি শ্রদ্ধাকে করেছে সবার প্রিয়।
এই ছ’জন নারী দেখিয়ে দিয়েছেন সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক সাজ নয়। যখন মেধা, সংবেদনশীলতা আর নেতৃত্ব একসাথে মিলিত হয়, তখনই তৈরি হয় সত্যিকারের সৌন্দর্য। একদিকে ২০২৫-এর ভারত বদলে যাওয়া দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। আর এই নারীরা আজকের তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নতুন পথের।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।