আমুদরিয়া নিউজ : “মিস মালা সুব্রহ্মনিয়ম একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের একজিকিউটিভ। তিনি সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাড়ে ৯টায় ব্যাঙ্কে পৌঁছন। কাজকর্ম সেরে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে রাত ৯টা তো হয়ই। কোনদিন ১০টাও বাজে। তার পরে শুরু হয় একযোগে ডিনার ও পরদিনের ব্রেকফাস্টের প্রস্তুতি। কাজ সেরে খেয়েদেয়ে যখন বিছানায় যান তখন ঘড়িতে রাত ১টা। আবার সকাল ৬টায় উঠতে হয়। কারণ সে সময়ে তাঁর পরিচারিকা ঢোকেন। ফলে, কোনদিনই ৬টা ঘণ্টার বেশি রাতে ঘুমোতে পারেন না। হিসেব মতো ৭ ঘণ্টা ঘুমোতেই হয়। তাই তিনি প্রতি রবিবার ভাবেন দুপুরে ঘুমিয়ে সেই কম ঘুমের ব্যাপারটা পূরণ করবেন। সেটা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এতটাই ঘুমিয়ে ফেলেন যে রবিবার রাতে ঘুমই আসতে চায় না। ফলে, দেরিতে ঘুমিয়ে সোমবার সকাল ৬টায় উঠতে সমস্যায় পড়েন।”
“এবার রনিত আগরওয়ালের কথা বলি। এমবিএ করে তিনি এখন একটি সফটওয়ার কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বেলা ১০টায় অফিস শুরু হয়। রাত ১০টা অবধি প্রায়ই থাকতে হয় তাঁকে। শনিবার হলে আবার লেট নাইট পার্টিতে যোগ দিতে হয় কাজের সূত্রে। কোন রাতেই ৫ ঘণ্টার বেশি ঘুমোতে পারেন না। রবিবার রনিত কিন্তু সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন। বেলা ১টায় লাঞ্চ করে নেন। ২টোর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। ৭টায় উঠে হালকা শারীরিক কসরত করে একটু আউটিংয়ের পরে দ্রুত ডিনার করে ফের শুয়ে পড়েন। রনিত হিসেব রাখেন যাতে রবিবার ঘুমটা ৬ থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়। রনিত কিন্তু এই রুটিন মেনটেন করে ভাল আছেন।”
এই দুটো কাহিনী বললাম তার কারণ, সম্প্রতি এই ঘুম নিয়ে একটা গবেষণার রিপোর্ট নজরে এসেছে। সেটা শেয়ার করার জন্যই এত কথা বলা।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঠিকঠাক না ঘুমোলে হার্টের উপরে নানা প্রভাব পড়ে। তাই অনেকে সারা সপ্তাহ অফিসের পর রবিবার সেটা মিটিয়ে নিতে চান। কিন্তু ঠিকঠাক মাত্রা মতো না ঘুমোলেই সমস্যা। ঘুম আপনার শরীরের ওপর কি প্রভাব ফেলছে? কি বলছে গবেষণা….আসুন জেনে নেওয়া যাক ।
গবেষণা বলছে, সপ্তাহে প্রতি রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু কাজের চাপে আর ঘুম দেরিতে আশার কারণে কারোরই সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্য একটি কারণ হল, মানুষ রাতে শুতে গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে রাখে। ফলে মধ্যরাতে গিয়ে চোখে ঘুম আসে। ফলে সকাল হলেই কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। অসমাপ্ত ঘুম নিয়ে তাড়াতাড়ি অফিসে ছুটতে হয়। ঘুমের ঘাটতি হলে হৃদরোগের আশঙ্কা সামান্য বাড়তেও পারে।
কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে যে সপ্তাহ শেষের এই ঘুমের ঘাটতি পূরণ আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ২০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
এই নিয়ে চিনে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে,
যারা রবিবারে কম ঘুমিয়েছেন, তাদের তুলনায় যারা বেশি ঘুমিয়েছেন তাদের হৃদরোগ, রক্ত সঞ্চালনজনিত রোগ হওয়ার আশঙ্কা মোটামুটি ১৯ শতাংশ কম।
আমেরিকায় ২০২৩ সালের ১৮টি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের সারা সপ্তাহে প্রতিদিনই ৫-৬ ঘণ্টার বেশি ঘুম হয় না তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি হয়।
বেশির ভাগ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যদি কারোর রাতে কাজ থেকে তা হলে সে সকালে ঘুম পূরণ করে নিতে পারে। কেউ আবার সকালে বেশি ঘুমিয়ে নেয়। এসব দিক গুলোও হৃদযন্ত্রের উপরে প্রভাব ফেলে ।
ইউরোপের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নাইট শিফট এ কাজ করেন। কিন্তু, সকালে ঘুমিয়ে ঘাটতি পূরণ করেন, তাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি সাধারণ ডিউটিকারীদের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। এমনকী, ওজন বাড়া, হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টরল ইত্যাদিরও আশঙ্কা রয়েছে নাইট শিফটের লোকজনদের বেশি।
তাই গবেষকদের একাংশের পরামর্শ
১. রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
২. প্রতিদিন রাতে অন্তত টানা ৬ ঘণ্টা হলেও ঘুমানোর চেষ্টা করুন ।
৩. রবিবার বেশি ঘুমালেও, ঘুমের পরিমাণ খুব বেশি সময় যেন না হয়। কারণ, এটা আপনার সোমবার ঘুম থেকে ওঠায় দেরি করিয়ে দিতে পারে।
৪. যতটা সম্ভব দিনের বেলা কম ঘুমোবেন। কারণ, দিনে ঘুমানোর কারণেই রাতে দেরিতে ঘুম আসে।
৫. হিসেব করে দেখে নেবেন, সপ্তাহে ঘুমের ঘাটতি হলে তা কোনভাবে মেটানোর চেষ্টা করবেন।
৬. মোটামুটি একই সময়ে খাবারের অভ্যেস রাখুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। মন ভাল রাখুন। এতে হৃদরোগের আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমে।
(একাধিক সংবাদ সূত্রে এই গবেষণার ফলাফল আমরা জেনেছি। এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।)
শিউলি ভট্টাচার্য
বি এ অনার্স, পলিটিকাল সায়েন্স। ট্রেনি কনটেন্ট রাইটার।
আমুদরিয়া নিউজ প্রথম কর্মস্থল।