আমুদরিয়া নিউজ ডেস্ক: খাতায় কলমে এটা শরৎকাল। কিন্তু রিয়েলিটিতে গ্রীষ্মকাল। বলা যায় গ্রীষ্মকালকে টেক্কা দিচ্ছে এখন শরৎবাবু। আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ থেকে রোমান্টিক হওয়া দূরের কথা, আকাশের দিকে তাকালে চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
তো এই গরমে অতিরিক্ত সাবধান থাকুন। না হলেই অসুস্থ হতে পারেন। এমনকী, গরমের মধ্যে বেলা ১১টা থেকে ৩টে, যে সময়ে সূর্যের তাপ প্বল থাকে, সেই স,ময়টা একান্ত জরুরি না হলে বাইরে ঘোরাঘুরি করা থেকে বিরত থাকুন। আমার মত নয়, এটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
মনে রাখবেন, নানা কারণে এখন গোটা বিশ্বেই বিস্তীর্ণ এলাকায় দাবদাহ চলছে। ভারত শুধু নয়, ইউরোপের দেশগুলিতেও প্রবল দাবদাহ চলছে। ভারতের রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগর আজকেও তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। দিল্লি, ঝাঁসি, আগ্রায় গরমে কাহিল বাসিন্দারা।
বিদেশের কথা বলতে গেলে জার্মানি, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকেও এখন বেজায় গরম। প্রবল গরমে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই. দেশে-বিদেশে দাবদাহের কারণে মৃত্যুর ঘটনারও খবর কম নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খবর অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দাবদাহে অসুস্থের সংখ্যা ১২৫ মিলিয়ন বেড়েছে। ২০০৩ সালে ইউরোপে দাবদাহের কারণে ৬৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০১০ সালে দাবদাহের জেরে রাশিয়াতে ৫৬ হাজার জনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে শারীরিক পরিশ্রমের পেশার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বয়স্কদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলে তাঁদের বিপদ বেশি। গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকিও অনেক বেশি। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, টোটোচালকদের সমস্যা মারাত্মক। ট্রাফিক পুলিশের ঝুঁকিও বেশি।
মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরের ভেতরের তাপ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার জন্যই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করে। যদি শরীরের উপরের তাপমাত্রা টানা বেশি হয়, মানে রোদে পুড়তে থাকেন তখন ভেতরের তাপমাত্রার সঙ্গে ভারসাম্য থাকে না। আমাদের হার্ট তখন শরীরের উপরের দিকে, ত্বকে বেশি রক্ত পাঠাতে থাকে। তাই বেশিক্ষণ চড়া রোদে থাকলে আমাদের মুখ ও শরীরের খোলা অংশ লাল দেখায়।
এটাই কিন্তু হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলির একটা।
এ ছাড়া মাথাব্যথা হবে। মাথা ঘুরবে। শারীরিক অস্বস্তি, অস্থিরতা, বিভ্রান্তি দেখা দেবে। হিট স্ট্রোক হলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সাময়িকভাবে অসাড় হয়ে পড়বে। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যেতে পারে। তখন অজ্ঞান হওয়ার আশঙ্কা বেশি।মনে রাখবেন ঘাম হলে তা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। কিন্তু বেশি ঘামলে সমস্যা বাড়তে পারে। কারণ, যাদের হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাঁদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ডাক্তারদের মতে, বেশি ঘামলে শরীর থেকে জল কমে যায়। তাতে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। তখন হৃদযন্ত্র শরীরের নানা যায়গায় রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে। যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে বা যারা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের এমন পরিস্থিতিতে হার্ট-অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। তাই মনে রাখবেন এ সময়টায় বাইরের কাজ কমিয়ে দিতে হবে। পুজোর বাজার না হয় সূর্য ডুবলেই করবেন। মিটিং-মিছিলে গেলেও সন্ধ্যার পরে যাওয়াই শ্রেয়। হবে। বেলা ১১টা থেকে ৩টে অবধি টানা রোদে থাকা থেকে বিরত থাকুন। বাড়িতে জানালায় পর্দা ব্যবহার করুন।
অথবা জানালার বাইরে এমন কিছু লাগান, যাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। পর্যাপ্ত জল খান। অবশ্যই ভাল করে স্নান করুন। প্রয়োজনে দুবার। বারবার চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিন। বাইরে বেরোতে হলে একটানা কাজ করবেন না। মাঝেমাঝে বিশ্রাম নিন। ঢিলেঢালা এবং বাতাস খেলতে পারে এমন পোশাক পরুন। অবশ্য, অবশ্যই সানগ্লাস ব্যবহার করুন। গরম মানেই ঠাণ্ডা পানীয়, ক্যান, বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বেশি খাবেন না। মনে রাখবেন এটা কাগজে-কলমে, ক্যালেন্ডারে শরৎকাল হলেও আসলে গ্রীষ্মকালের একটা মারাত্মক এক্সটেনশন।