কিশোর সাহা
আমুদরিয়া নিউজ : চন্দ্রভাগা যা কি না চেনাব নদী, কতটা হিমশীতল তা ডোডা জেলার সকলেই জানেন।
চেনাব নদীর গভীরের অবস্থা কতটা বিপজ্জনক সেটা হিমাচলপ্রদেশের ওয়াকিবহালরা বোঝেন।
চেনাব নদীর ধারে দাঁড়িয়ে তাঁর গর্জন শুনলেই বুকটা কেঁপে উঠতে পারে।
সেই নদী কখনও গিলে খেয়েছে হেলিকপ্টার।
কখনও গাড়ির পর গাড়ি।
আর কত মানুষ যে ডুবে গিয়েছে তার হিসেব কে রাখে!
এই চেনাব নদী থেকেই নিজের জীবন বিপন্ন করে বছরের পর বছর ধরে ডুবন্ত মানুষকে বাঁচিয়ে চলেছেন হামজা শেখ নামের এক চির তরুণ।
তিনি সরকারি কর্মচারীও নন। আনুষ্ঠানিক অর্থে প্রশিক্ষিত পেশাদার উদ্ধারকারীও নন। তিনি কোনও মাইনে পান না। কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। একটা লাইফ জ্যাকেট নিজের টাকায় কেনা ছাড়া কোনও প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামও নেই। অক্সিজেন বা ডুবুরির পোশাক তো স্বপ্নের ব্যাপার।
এই নিয়েই ১৫ বছর ধরে হামজা শেখ চেনাবের জল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। গাড়ি থেকে দেহ বের করছেন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, অন্তত ৩০০ জনকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে তুলে এনে প্রাণে বাঁচিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থার খবর অনুসারে, হামজা আজ পর্যন্ত সরকারি কোনও স্বীকৃতি পায়নি। অথচ একজন সরকারি উদ্ধারকারী নদীতে নেমে দড়ি ছিঁড়ে ডুবে যেতে বসেছিলেন, তাঁকে প্রাণ বিপন্ন করে হামজা শেখ বাঁচিয়েছেন।
হামজা জানান, নদীর জলে এত বালির স্রোত যে চোখ বন্ধ রাখতে হয়। সে সময়ে ধারাল পাথরে আঘাত লাগে। অনেকবার রক্তাক্ত হয়েছেন হামজা শেখ। তবু হাল ছাড়েননি। এখনও ওই এলাকায় চেনাবে কেউ ডুবে গেলে কোনও সরকারি দফতরে নয়, প্রথমে হামজা শেখের কাছে ফোন যায়।
মাঝরাত হোক, ভোর হোক, কনকনে শীত পড়ুক বা প্রবল বৃষ্টি, হামজা শেখ লাইফ জ্যাকেট সম্বল করে ঝাঁপিয়ে চেষ্টা করেন তাঁকে বাঁচানোর।
এই বাঁচাতে গিয়ে বিপাকেও পড়েছেন অনেকবার। একবার তো এক মহিলা জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে বাঁচাতে হামজা নামলে তিনি তো প্রায় হামজাকে ডুবিয়ে দিচ্ছিলেন। বহু কষ্টে তাঁকে উদ্ধার করে আনতে পারেন হামজা।
হামজা কিন্তু কোনও টাকা নেন না। একটু সম্মান চান শুধু। পুরস্কারের আশা কি করেন! হয়তো সেটাও না। কিন্তু, হামজা শেখ কেন সরকারি সম্মান পাবেন না সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
দেখা যাক, হামজা শেখ কবে সরকারি সম্মানের ডাক পান!