আমুদরিয়া নিউজ : কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে ভারত য়ে হাত গুটিযে বসে থাকবে না, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, হামলাকারীরা এমন শাস্তি পাবে যা তাদের কল্পনাতীত হবে।
মঙ্গলবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারত প্রত্যাঘাত করেছে। বেশ কয়েকজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক লক্ষ্যবস্তু কীভাবে চিহ্নিত হয়েছে, কেন!
সন্ত্রাস দমন অভিযানে যুক্ত সংস্থার অফিসারদের একাংশের সূত্র ধরে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে ভারত প্রত্যাঘাত করেছে।
ভারতবিরোধী জঙ্গি সংগঠন যেমন লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি), জইশ-ই-মহাম্মদ (জেইএম), এবং হিজবুল মুজাহিদিন, এই জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই)।
টাকাপয়সা, পরিকাঠামো দিচ্ছে পাকিস্তান, সঙ্গে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জঙ্গিদের।
এই জঙ্গি সংগঠনগুলি যাতে বিশ্বের নানা দেশের গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে পারে সে জন্য প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনকে পাক সেনারা ও পাক গোয়েন্দারা স্থানীয় প্রতিরোধী সংগঠন হিসেবে দেখায়।
আসলে জঙ্গি সংগঠন হলেও সামনে নাম রাখে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (পিএএফএফ), কাশ্মীর টাইগার্স (কেটি) এসব।
অপারেশন সিন্দুরে জঙ্গিদের এমন ৯টি প্রশিক্ষণ শিবির এবং লঞ্চ প্যাডে প্রত্যাঘাত করা হয়েছে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই সব জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলি যাতে বাইরে থেকে বোঝা না যায় তাই সেখানে বড় বড় বোর্ডে লেখা ছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কোনওটায় লেখা ছিল বেসিক হেলথ সেন্টার, এমন ফলস সাইনবোর্ডড লাগিয়ে সারা বিশ্বের গোয়েন্দাদের বোকা বানানোর চেষ্টা হয়েছে।
পাকিস্তানে বসে ভারত বিরোধী বক্তব্য রাখার জন্য জঙ্গিদের ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া হয়।
যেমন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহান আল্লাহে জৈশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার ভারত বিরোধী বক্তৃতা দেয়।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি) জঙ্গলে ও গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য মুজাফফরাবাদের সৈয়দনা বিলাল ও শাওয়াই নাল্লা এবং কোটলির রাহিল শহিদের মতো ক্যাম্পগুলি ব্যবহার করছে জঙ্গিরা
এবার আসুন কয়েকটি জঙ্গি শিবিরের বিবরণ দেওয়া যাক।
১) শাওয়াই নাল্লা ঘাঁটি : ২০১৫ সাল থেকে এটি জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদানের প্রধান কেন্দ্র। এটি জৈশ-ই-মোহাম্মদের অপারেশনাল হেড কোয়ার্টার হিসেবে কাজ করে এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা সহ পরিকল্পনামূলক অভিযানের সাথে যুক্ত। এখানে জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার, মুফতি আব্দুল রউফ আসগর, মাওলানা আম্মা সপরিবারে রয়েছেন।
মাসুদ আজহার এখানে অসংখ্য ভারতবিরোধী বক্তৃতা দিয়েছেন, তরুণদের ইসলামিক জিহাদে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। জৈশই-মোহাম্মদ নিয়মিতভাবে এই স্থানে অস্ত্র, শারীরিক এবং ধর্মীয় প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে।
২. মারকাজ তাইবা, মুরিদকে
২০০০ সালে মুরিদকে (শেখুপুরা, পাঞ্জাব) এর নাঙ্গাল সাহদানে রযেছে। মারকাজ তাইবা হল এলইটি-র প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি পাকিস্তানের ভেতর ও বাইরে থেকে আসা সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে।
এখানে প্রতি বছর প্রায় ১,০০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়। জানা গেছে, ওসামা বিন লাদেন এই কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি মসজিদ এবং গেস্টহাউস নির্মাণে টাকা দিয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি আজমল কাসভ সহ ২৬/১১ মুম্বাই হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এবং ডেভিড হেডলি এবং তাহাউর রানার মতো ষড়যন্ত্রকারীদের আশ্রয় দিয়েছিল।
৩. সরজাল / তেহরা কালান
নারোওয়াল জেলার (পাঞ্জাব, পাকিস্তান) শকরগড় তহসিলে অবস্থিত, এই জেইএম লঞ্চিং প্যাড। বিভ্রান্ত করতে বাইরে বোর্ডে লেখা রয়েছে, তেহরা কালান পিএইচসি।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা সেক্টরের কাছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এটি সুড়ঙ্গ নির্মাণ, ড্রোন অভিযান এবং অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের জন্য ব্যবহৃত হয়। মোহাম্মদ আদনান আলী এবং কাশিফ জানের মতো জেইএম নেতারা প্রায়শই সেখানে যান।
৪. মেহমুনা জোয়া সুবিধা, শিয়ালকোট
শিয়ালকোট জেলার হেড মারালায় ভুট্টা কোটলি সরকারি বিএইচইউ-এর মধ্যে অবস্থিত, এই হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম) ঘাঁটি। জম্মুতে অনুপ্রবেশের জন্য এই ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়। এখানে ক্যাডারদের অস্ত্র পরিচালনা এবং সন্ত্রাসী কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ ইরফান খান। যিনি জম্মু অঞ্চলে একাধিক হামলার সাথে যুক্ত ছিলেন। যে কোনো সময়, ২০-২৫ জন জঙ্গি এখানে থাকে।
৫. মারকাজ আহলে হাদিস, বার্নালা, ভিম্বার
মারকাজ আহলে হাদিস, বার্নালা হল পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে লস্কর-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।
বারনালার উপকণ্ঠে কোট জামেল রোডে অবস্থিত। এই লস্কর-এর পুঞ্চ-রাজৌরি-রিয়াসি সেক্টরে অনুপ্রবেশকারী এবং অস্ত্র সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে ১০০-১৫০ জন ক্যাডার থাকতে পারে। অভিযানের জন্য একটি স্টেজিং গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করে। কাসিম গুজ্জর, কাসিম খান্দা এবং আনাস জারারের মতো লস্কর-এর কর্মীরা এখান থেকে কাজ করে, যার তত্ত্বাবধানে সিনিয়র কমান্ডাররা থাকেন।
৬. মারকাজ আব্বাস, কোটলি
মারকাজ সাইদনা হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব নামেও পরিচিত। এই জেইএম সুবিধাটির নেতৃত্ব দেন হাফিজ আব্দুল শাকুর, যিনি মুফতি আব্দুল রউফ আসগরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এখানে ১০০-১২৫ জন জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি থাকতে পারে।
পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরে অনুপ্রবেশ অভিযানের পরিকল্পনা এবং পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ভারতের এনআইএ এই ঘাঁটির নেতা কারি জারারকে খুঁজছে।
৭. মাসকার রাহিল শহিদ, কোটলি
১৫০-২০০ জঙ্গির ডেরা। এই শিবিরটি অস্ত্র প্রশিক্ষণ, স্নাইপিং, বিএটি অ্যাকশন এবং পাহাড়ি অঞ্চলে বেঁচে থাকার দক্ষতা শেখায়। এটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এইচএমের সবচেয়ে পুরানো ঘাঁটি।
৮. শাওয়াই নাল্লাহ ক্যাম্প, মুজাফফরাবাদ
বায়তুল মুজাহিদিন নামেও পরিচিত, মুজাফফরাবাদ-নীলাম রোডের চেলাবন্দি ব্রিজের কাছে এটি। এই লস্কর-ই-তৈয়বা ক্যাম্পটি ২০০০ সালের গোড়ার দিকে চালু হয়। এটি ধর্মীয় শিক্ষা, শারীরিক কন্ডিশনিং, জিপিএস ব্যবহার এবং অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়। ২৬/১১ হামলাকারীরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এটি ২০০-২৫০ জঙ্গিকে আশ্রয় দিতে পারে এবং উত্তর কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর জন্য একটি ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে।