আমুদরিয়া নিউজ : ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি পুরানো বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছেন, ইস কি দারুণ এই বাড়িটা, যদি এটা কত বছর পুরোনো, এখানে কারা থাকত, এসব জানতে পারতাম। পারবেন, একদিন সেই বাড়িরও ইতিহাস আপনি জানতে পারবেন। ভাবছেন, সে আবার কি করে হয়! ইতিহাস তো তাজমহল, লালকেল্লা, হাওড়া ব্রিজ এসবের আছে। তাই বলে, রাস্তায় পুরানো বিল্ডিং এর ইতিহাস! এটা অসম্ভব। আজ্ঞে না, এটাও সম্ভব।
নয়ডার ৪ দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া এমনই এক অ্যাপ বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এটির প্রয়োগ এখনও পর্যন্ত দিল্লি থেকে শুরু হয়েছে।
এই অ্যাপের নাম ওয়াপাস, যার অর্থ ফিরে যাওয়া। অ্যাপের বৈশিষ্ট্য গুলি হল,
১. কোন জায়গার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
২. এটি গুগল কিংবা যে কোন সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে না। পুরানো বই, কিছু লিখিত ইতিহাস, স্থানীয় মানুষজনদের সাথে আলোচনা, ও ইতিহাসবিদদের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীরা তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেগুলি অ্যাপে যুক্ত করে।
৩. এটি এখনও পর্যন্ত আইফোনেই ব্যবহার করা যায়। তবে তারা নিশ্চিত করেছেন যে খুব তাড়াতাড়ি এটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও ব্যবহার করা যাবে।
৪. ঐতিহাসিক স্থানে বেড়াতে গেলে যেমন একজন গাইড থাকেন, তেমন গাইডের মতই কাজ করবে এই অ্যাপ। যেমন ধরুন, আপনি দিল্লির রাস্তায় হাঁটছেন বা গাড়ি চালাচ্ছেন। অ্যাপে থাকা ডেটা অনুযায়ী আপনি যদি ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো কোন বিল্ডিং, বা হোটেল কিংবা স্থাপত্যের কাছাকাছি থাকেন, তবে, তৎক্ষণাৎ আপনার ফোনে নোটিফিকেশন যাবে।
৫. এই অ্যাপটি আপনাকে ইতিহাস পড়িয়ে একঘেয়ে করবে না। অ্যাপে আপনারা, ইতিহাস সম্মন্ধে ভিডিও দেখবেন ও শুনবেন, ঠিক যেমন ভাবে একজন গাইড আমাদের সবকিছু ব্যাখ্যা করেন।
নির্মাতা এক শিক্ষার্থী আরিয়ান, সংবাদ মাধ্যমে জানান, তারা অ্যাপটির ব্যবহার আরও সহজ করার প্রচেষ্টা করছেন। তাদের দলের আরও তিনজন হলেন, অর্ণব বিজ, বিহান থাম্পি এবং কারিসা গুপ্তা।
কিভাবে তাদের এই উদ্যোগ শুরু হয় ?
এই প্রশ্ন করতে, বিহান জানান, তার বয়স যখন চার বছর, তখন থেকেই তার বাবা তাকে নিয়ে কোথাও গেলে প্রতিটি জায়গার গল্প বলতেন। কিন্তু কিছু বছর পরে সেই কাঠামো গুলোই দূষণের কারণে ও পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ আর বিশেষ কথা বলেন না এগুলোর ব্যাপারে। তখনই সে এটা কীভাবে করা যেতে পারে সেটা ভেবে বন্ধুদের সহযোগিতায় এই অ্যাপ বানিয়ে ফেলে।
অজানা ইতিহাসের সন্ধানে,
অ্যাপটির জন্য গবেষণা করতে গিয়ে তারা দিল্লির একটি জায়গায় হরপ্পা সভ্যতার চেয়েও পুরোনো সময়ের পাথরের হাতিয়ার পেয়েছিলেন। সেই জায়গায় খুব একটা কেউ বেড়াতে যান না। আবার কেউ হয়তো সেই জায়গার ব্যাপারে জানেনই না।
এ ছাড়াও তারা নয়ডার একটি গুরুদ্বারে, এমন একটি পাথর খুঁজে পেয়েছেন, যা দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং এবং চন্দ্রশেখর আজাদ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিস্ফোরক তৈরি করতে ব্যবহার করেছিলেন বলে একজন ইতিহাসবিদ গাইড তাদের জানান।
তারা তাদের অ্যাপে এমন ইতিহাস গুলিই যোগ করবেন, যে সবের ব্যাপারে খুব কম মানুষই জানেন।
তারা এই অ্যাপটি শুরু করার জন্য নিজেদের সঞ্চয় থেকে ২ লক্ষ টাকা দেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যাতে এই ইতিহাসগুলি জানার থেকে দূরে না থাকে সেই দিকেও নজর রেখেছেন তারা। আপাতত দিল্লি থেকে শুরু করলেও তারা পুরো দেশে তাদের এই অ্যাপকে ছড়িয়ে দিতে চান।
তারা নিশ্চিত যে একদিন নিশ্চয়ই দেশের সকল মানুষ তাদের অ্যাপের হাত ধরে অজানা ইতিহাসে ঘুরে আসবে।
প্রতিবেদক : শিউলি ভট্টাচার্য্য