আমুদরিয়া নিউজ : বাড়িতে বসেই ছেলের উড়ানের ভিডিও দেখতে ইউটিউবে খুঁজছিলেন বাবা জগন্নাথ স্যাল। তিনি হিমাচল প্রদেশের একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল। এয়ার শো-এ পুত্র নমনের পারফরম্যান্স দেখছিলেন জগন্নাথ। ইউটিউবে সেই ভিডিয়ো দেখতে দেখতে স্ক্রল করছিলেন। সেই সময়ই ভিডিওর পরামর্শ তালিকায় উঠে আসে তেজস বিধ্বস্ত হওয়ার খবর। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তিনি আঁচ পান যে কিছু বিপদ ঘটেছে। এদিকে দুবাই এয়ার শো–তে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তেজস যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। তেজস ভেঙে পড়া আর জগন্নাথের ইউটিউব স্ক্রল করার মধ্যে কোনও যোগসূত্র ছিল কি না তখনও কেউ বোঝেনি। জগন্নাথ দ্রুত খবর দিয়েছিলেন নমনের স্ত্রীকে। কিছুক্ষণ পরে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে যান বায়ুসেনার আধিকারিকরা। তখনই পরিবার নিশ্চিত হয়, নমন আর ফিরবেন না। বাবা ছেলেকে শেষবারের মতো ইউটিউবেই অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার অন্যতম সাক্ষী রয়ে যায় ইন্টারনেট।
নমন স্যাল ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত পাইলট। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বাসিন্দা নমন ২০০৯ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন। প্রথমে প্রশিক্ষণ, তারপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব—নমন তার কর্মজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে কাজ করেছেন। যেহেতু ফাইটার জেট চালানো অত্যন্ত প্রযুক্তিনির্ভর এবং ঝুঁকিপূর্ণ, তাই তাঁকে বিশেষ অভিযানের জন্যও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
নমনের পারিবারিক জীবনও বায়ুসেনার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাঁর স্ত্রীও একজন উইং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত। ব্যস্ত সময়সূচির মধ্যেও দু’জন একে অপরের কাজের প্রতি সমর্থন জানাতেন। তাঁদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে, যার বয়স কম। সময় পেলেই নমন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। সহকর্মীদের মতে, কাজের চাপ থাকলেও পরিবারের প্রতি তাঁর সম্পর্ক ছিল খুব ঘনিষ্ঠ।
দুবাই এয়ার শোতে অংশ নেওয়াও ছিল নমনের দায়িত্বের অংশ। প্রদর্শনী উড়ানে অংশ নিতে আগেও তিনি বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন। তবে এ বারের উড়ানে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাল তেজস—তা এখনও তদন্তাধীন। দুর্ঘটনার পর ভারতীয় বায়ুসেনা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভারতীয় বায়ুসেনার সেই তদন্ত কমিটি ব্ল্যাকবক্সসহ সব তথ্য পরীক্ষা করছে। প্রাথমিক সূত্র বলছে, তেজসের প্রদর্শনী উড়ানের সময় একটি কঠিন টার্ন নেওয়ার সময় সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক কী কারণে নিয়ন্ত্রণ হারাল বিমানটি—তা জানতে ব্ল্যাকবক্সসহ সব প্রযুক্তিগত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের প্রদর্শনীতে পাইলটদের উচ্চ দক্ষতা প্রয়োজন, আর নমন স্যাল ছিলেন সেই তালিকার অন্যতম। তবুও এত বড় দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা এখন তদন্তের বিষয়।
নমনের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছানোর পর কাংড়ায় তাঁর বাড়িতে শোকের পরিবেশ। শৈশবের বন্ধু ও শিক্ষকরা বলেছেন, নমন শান্ত স্বভাবের, মনোযোগী ও পরিশ্রমী ছাত্র ছিলেন। যে লক্ষ্য ঠিক করতেন, সেটি অর্জন করতে তিনি নিয়মিত চেষ্টা চালাতেন। নমন স্যালের পেশাদারি জীবন এবং ব্যক্তিগত পথচলা—দুটিই গড়ে উঠেছিল দায়িত্ববোধ, অধ্যবসায় এবং পরিবারের প্রতি গভীর টানকে কেন্দ্র করে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সেই দীর্ঘ পথ যেন হঠাৎ থেমে গেল। নমনের মৃত্যু শুধু পরিবারের নয়—পুরো বিমানবাহিনীরই অপূরণীয় ক্ষতি।