
আমুদরিয়া নিউজ : বৃষ্টি হচ্ছে। তাও গরম থেকে রেহাই নেই। এই জলের ছিটের মাঝে মাঝেই গরম সরগরম হয়ে উঠছে। তবে খামখেয়ালি আবহাওয়া যাই করুক শরীর আর মন দুইই এই গরমে জয় করতে কিন্তু আইসক্রিমের জুড়ি মেলা ভার। আইস অর্থাৎ কিনা বরফ। আর ক্রিম অর্থাৎ কিনা জমানো ঘন দুধ। কিন্তু এ তো ছোট থেকেই শুনে আসছি। এমনকি আমার আপনার মতো সবাই ছোট থেকে শুনে আসছে। নতুন কী ?

সেটাই হল আজকের এই প্রতিবেদনের মূল গল্প। বিষয়টা হল আইসক্রিম ঠাণ্ডা অবস্থাতেই ভালো। তীব্র গরমে এই মিষ্টি খাবার মুহূর্তের মধ্যে হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। আইসক্রিমের কোন থেকে আলাদা হয়ে ধীরে ধীরে ভূমিষ্ট হতে থাকে। আর গলে গেলেই এর বিশেষ চাহিদা থাকে না। এমনকি খেতে নাও ইচ্ছে করতে পারে। এবার সেই ক্ষুদ্র আবেগের দিকে নজর পড়েছে আইসক্রিম প্রস্তুতকারকদের। আইসক্রিম যাতে গলে না যায় তার জন্য সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞানের। একটু বিস্তারিত বলা যাক।

কিছু বছর আগে জাপানের কানাজাওয়া আইসের তৈরি আইসপপ এবং সফট-সার্ভ আইসক্রিম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়। কারণ, এই আইসক্রিম প্রচণ্ড গরমেও গলছিল না। রহস্য লুকিয়ে ছিল পলিফেনল নামের এক বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অণুতে। অনেক ফলেই এই উপাদান থাকে। বিজ্ঞানীরা এটি আইসক্রিমে মিশিয়ে এমন এক স্থিতিশীল গঠন তৈরি করেন, যার ফলে আইসক্রিম আকার হারায় না। এতেই জোর চর্চা শুরু হয়েছিল। এখান থেকেই শুরু।

আইসক্রিম মূলত ক্রিম ও চিনি দিয়ে তৈরি। মেশিন ঠান্ডা ড্রামে মিশ্রণটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জমাট বাঁধায়, যাতে বরফের স্ফটিক বড় না হয়। কিন্তু মাঝপথে একটু গলে গেলে এবং পরে আবার জমাট বাঁধলে স্ফটিক বড় হয় এবং স্বাদ খারাপ হয়ে যায়। এই সমস্যা এড়াতে অনেক কোম্পানি আগে থেকেই সমুদ্র শৈবাল থেকে প্রাপ্ত ক্যারাজিনান এবং গুয়া ফলের বীজ থেকে তৈরি গাম ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। এগুলিই স্থিতিশীলতা বাড়ায়।

এরপরই বহুল চর্চিত এই আইসক্রিম বানানোর পদ্ধতি এলো বিজ্ঞানের রাডারে।
উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য বিজ্ঞানী ক্যামেরন উইক্স কানাজাওয়া আইসের ভিডিও দেখে পরীক্ষা শুরু করেন। তিনি বিশেষ এক ধরনের পলিফেনল, ট্যানিক অ্যাসিড বিভিন্ন ঘনত্বে ক্রিমে মিশিয়ে দেখেন কী ঘটে।

০.৭৫%, ১.৫% ও ৩% ঘনত্বে মেশানোর পর তিনি লক্ষ্য করেন, ঘনত্ব যত বাড়ছে, মিশ্রণ তত দ্রুত ঘন হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ঠান্ডা করার পর দেখা যায় ৩% ট্যানিক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম এতটাই শক্ত যে উল্টে দিলেও পড়ে না। মাইক্রোস্কোপে দেখা গেল, ট্যানিক অ্যাসিড প্রোটিনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে একধরনের জাল বা সাপোর্ট তৈরি করছে। এর ফলে ফ্যাটের কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে মিশতে পারছে না। তাই গলে যাওয়া আইসক্রিমের ফ্যাট নিচে পড়তে পারছে না। ফলাফল হল, আইসক্রিমের আকার বজায় রইল। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর টেক্সচার পুডিংয়ের মতো নরম হয়ে যায় তবুও এভাবেই জন্ম নিল ভবিষ্যতের আইসক্রিম।

তবে এই প্রযুক্তি কোনো জাদু নয়। আইসক্রিম ঠান্ডাই থাকবে। শুধু আকার হারাবে না। বিজ্ঞানীরা মজা করে বলেন, ‘এটা আপনার আইসক্রিমের জন্য একধরনের অন্তর্বাস।’ অর্থাৎ এটি সমর্থন দেয়, কিন্তু গলনকে পুরোপুরি থামাতে পারে না। আবার অন্যদিকে খাবারের ক্ষেত্রে স্বাদ যেমন জরুরি, তেমনি প্রত্যাশাও। যদি আপনি ভ্যানিলা আইসক্রিম ভেবে খান এবং সেটা আসলে আলু সেদ্ধ হয়, তবে অভিজ্ঞতা হবে ভয়ংকর।

তাই অতিরিক্ত শক্ত বা রাবারের মতো আইসক্রিম অনেকেরই পছন্দ হবে না। তাই এখনই আইসক্রিমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা শক্ত। কিন্তু ‘টেকনোলজি’ তো আবিষ্কার হয় গিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠছে পলিফেনল কি একদিন আইসক্রিম শিল্পে নতুন বিপ্লব আনবে ? হয়তো দূরপাল্লার পরিবহনে এটি কাজে লাগবে, যাতে আইসক্রিম আকার ঠিক রাখে। কিন্তু এমন আইসক্রিম, যা হেয়ার ড্রায়ারের গরমও সহ্য করবে, আবার আমাদের পাড়ার আইসক্রিম স্টলেও আসবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।