আমুদরিয়া নিউজ ডেস্কঃ উই ওয়ান্ট জাস্টিস। এই স্লোগানে এখন উদ্বেল পশ্চিমবঙ্গ, সহ গোটা দেশ। কারণ, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে বিচার পেতে দেরি হওয়াতেই মানুষের মনে ক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধে। আর জি কর কাণ্ডের পরে সেই ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে। রাতের পর রাত আন্দোলন চলছে। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়া কিছুটা হতাশা, নিরাশা বাড়ছে।
এমন একটা প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়িতে এক বছর আগে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে থেঁতলে হত্যার দায়ের দোষীর কি সাজা হয় সে দিকে তাকিয়ে ছিল জনতা। আজ, শনিবার দুপুরে শিলিগুড়ি আদালত দোষীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। তাতে জনতার ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে।
এক বছর আগে ২১ অগস্ট ওই ঘটনা ঘটেছিল। এক বছর ১৪ দিনের মাথায় দোষীকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হল। শিলিগুড়ি আদালতের অ্যাডিশনাল সেশন জাজ (পকসো) অনিতা মেহেত্রা মাথুর ওই সাজা শুনিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম মহম্মদ আব্বাস।
জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট মাটিগাড়ার জঙ্গলের ভিতরে একাদশ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মহম্মদ আব্বাস। ধর্ষণের সময় ভয়ঙ্কর ভাবে শারীরিক অত্যাচার করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই স্কুল ছাত্রীর। এরপর পরিচয় গোপনের জন্য ওই ছাত্রীর মুখ ইট দিয়ে থেথলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়িতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে মহম্মদ আব্বাস নামের ওই ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর একাধিক সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে দোষী সাবস্ত করা হয়। এদিন তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়।
এই ঘটনার পরে আদালত চত্বরে দাঁডিয়ে থাকা নমিতা ছেত্রী, রমিতা রাইরা বলেছেন, আমাদের চেনাজানা অথবা অচেনা কারও উপর যদি এধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ হয় তা হলে আমরা মনে করি ওই অপরাধীর বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ফাঁসি হলেই সে আর এই ধরনের অপরাধ করতে পারবে না।
গতকাল আরেকটি ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তকে ২৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ওই ঘটনায় ধর্ষণ করে ভিডিও বানিয়েছিল অভিযুক্তরা। তিন জনের ২৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনায় আদালত। গতকাল কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফার্স্ট) নায়ার আজম খান ওই কারাদণ্ডের সাজা ছাড়াও প্রত্যেক সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করার রায় শোনান। সাজা প্রাপ্ত আসামীদের নাম জামির হোসেন, ফিরোজ আলম ও রাসেল মিয়াঁ।
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর শীতলখুচি কলেজের এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ওই তিন যুবক। এরপর সংলগ্ন বামনডাঙ্গা এলাকার একটি ফাকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একে একে ওই তিন যুবক ধর্ষণ করে মোবাইলে ভিডিও তুলে রাখে। এরপর ওই ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ঘটনার কথা বাইরে জানালে ওই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হবে। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে ঘটনার কথা জানালে পরিবারের পক্ষ থেকে শীতলখুচি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাসেরও বেশী সময় ধরে ওই মামলা চলার পরে এদিন তার রায় ঘোষণা করা হয়।
আইনজীবীদের কয়েকজন জানান, বিচারের প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত দ্রুত হচ্ছে কারণ, আমজনতা চাপ বাড়িয়েছে। একজন আইনজীবী বলেছেন, যত বেশি চাপ তৈরি হয় বিচার প্রক্রিয়া তত দ্রুত এগোয়। মানুষ মৃত্যুদণ্ড চায় বলে রাস্তায় নামায় সরকারের উপর চাপ তৈরি হয়েছে। আমজনতা মনে করছে, এই চাপ বাড়ানোর কারণে ঘটনার বিচার করার ব্যাপারে আরও কমিটেড হবে। সে কারণে প্রতিবাদগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে এখন বেশি আওয়াজ উঠছে। একটাই আওয়াজ—উই ওয়ান্ট জাস্টিস। তিলোতত্তমার খুনিরা কঠোর সাজা না পাওয়া অবধি চলবে এই স্লোগান, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।