আমুদরিয়া নিউজ : দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা। কোনদিন আবার ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন। পরিশ্রমের ফলই পেলেন হাতনাতে। গড়লেন নজির। হাওড়ার শিবপুরের পিএম বসতির বাসিন্দা মহম্মদ সাজিদ হোসেন রাজ্য উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম হয়ে দেখিয়ে দিলেন নিজের অধ্যবসায়ের ঝলক। শুধু তাই নয়, সাজিদ রাজ্য উচ্চ মাধ্যমিকে উর্দু মাধ্যমে পেয়েছেন সর্বোচ্চ নম্বর।
হাওড়া হাই স্কুলের ছাত্র সাজিদের বাবা হকারি করেন। মা নূরজাহান গৃহবধূ। পারিবারিক প্রতিকূলতায় প্রতিটি বিষয়ের আলাদা প্রাইভেট শিক্ষক পাননি সাজিদ। একটি কোচিংয়ে গিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে পরিশ্রম করতে তিনি সর্বদাই আগ্রহী ছিলেন। এসবের মধ্যেই সাজিদ উর্দুতে ৯৯, ইংরাজিতে ৯৩, অর্থনীতিতে ৯৬, ইতিহাসে ৯৮, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৯ ও ভূগোলে ৯৯ পেয়েছেন। আপাতত তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়তে চান।
তবে সাজিদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তিনি আইএএস হবেন। সাজিদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফতাব আলম বলেন, ‘সাজিদ আমার স্কুলে ও আমার কমিউনিটিতে গর্ব। সাজিদের মেধা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওর পরিশ্রম, ওর একাগ্রতা, ওর মনোবল সবই প্রশংসার যোগ্য। হাওড়া হাই স্কুলে সাজিদ পঞ্চম শ্রেণী থেকে পড়ছে। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সে প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম হয়েছে। মাধ্যমিকেও উর্দু মাধ্যমের মধ্যে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল সাজিদ।’
এদিকে সাজিদের বাবা-মা প্রচণ্ড খুশি। তাঁরা চান তাঁদের ছেলে বিনা বাধায় যেন পড়তে পারে। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর তাঁর বাবা বললেন, ‘আমরা ওকে কোনওদিনই কিছুতে বাধা দিইনি। ওর এই ফল আমাদেরও আশাতীত। ওর পড়াশোনার জন্য আমরা সবরকমভাবেই ওকে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি এবং থাকব।’ এদিকে সাজিদ জানান, তিনি ভেবেছিলেন উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশের মধ্যেই থাকতে পারেন।
সাজিদের বক্তব্য, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো স্কোর করার ইচ্ছে নিয়েই প্রস্তুতি নিয়েছি। রেজাল্ট বের হওয়ার আগে কিছুটা মানসিক সঙ্কোচ অনুভব করলেও রেজাল্ট বের হওয়ার পর সেটা কেটে যায়। এর জন্য মহান আল্লাকে অজস্র ধন্যবাদ। এ ছাড়া আমি আমার মা বাবা ও স্কুল শিক্ষকদের ধন্যবাদ দিতে চাই।’ সাজিদ জানান, তিনি বেশির ভাগ সময়ই পড়তেন। একদিনের পড়া না হলে রাতে ২ টো ৩ টে অবধি পড়ে তিনি সেই পড়া কভার করতেন। ক্রিকেটের প্রতিও সাজিদের টান রয়েছে। সে চেন্নাই সুপার কিংসের ফ্যান। তবে পরীক্ষার কারণে আইপিএল হাতছাড়া হলেও পরীক্ষার পরে কোনও ম্যাচই হাতছাড়া হয়নি সাজিদের।
সাজিদের যাত্রা শুভ হোক, এই কামনা করে আমুদরিয়া নিউজ।
প্রতিবেদক : অরিৎ চক্রবর্তী, আমুদরিয়া নিউজে ভিডিও এডিটিং ও কপিরাইটিং বিভাগে যুক্ত।