আমুদরিয়া নিউজ : মহিলা নির্যাতন, সাইবার অপরাধ দমনে কড়া আইন চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কলকাতার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় এখনও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। কিন্তু, তিনি যে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনায় ভীষণ রকম উদ্বিগ্ন তা এবার স্পষ্ট করে দিলেন। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়.কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সোশাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক প্রচার, সাইবার অপরাধ বেড়ে য়াওয়া রুখতে আরও কড়া আইন ও নিয়মনীতি চালু করার আর্জি জানিয়েছেন।
সেই চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, সোশাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক প্রচার বাড়ছে। কেউ একটা কিছু ভিডিও জোগাড় করে বা বানিয়ে উসকানিমূলক প্রচার করলে তা মুহূর্তে শেয়ারের সুবাদে ভাইরাল হচ্ছে। আবার কখনও এমন কিছু ভুয়ো ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে যাতে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। উপরন্তু, বিভ্রান্তিকর গল্প ফেঁদে নানা ছবি কাট-পেস্ট করে এমন ভিডিও বানানো হচ্ছে যে তা শেয়ারের ফলে গোলমালের আশঙ্কা বাড়ছে। এতে সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত নয়, এমন অনেক কনটেন্ট সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে, যা মহিলাদের উপরে অত্যাচার করতে উসকানি দিতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, সোশাল মিডিয়ার কিছু অংশে উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু পোস্টের প্রবণতা বাড়ছে। সাইবার অপরাধও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখেছেন, এই উসকানিমূলক কনটেন্ট, সাইবার অপরাধ, জনসাধারণের শান্তি এবং আমাদের সামাজিক কাঠামোর জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, লক্ষ্য করা গেছে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত উস্কানিমূলক আখ্যান, বিভ্রান্তিকর গল্প এবং ভুয়া ভিডিও সমাজের কিছু অংশের মধ্যে অপরাধমূলক প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু কনটেন্ট কেবল ভুল তথ্যই ছড়ায় না, বরং সাম্প্রদায়িক অনুভূতিতে উস্কানি দেয়, হিংসা উস্কে দেয় বলে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের উসকানিমূলক কনটেন্ট সামাজিক সম্প্রীতি ব্যাহত তো করেই, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
এর পরেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের তাৎক্ষণিক এবং ব্যাপক অপব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে এনে লিখেছেন, সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা, জটিলতা এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব বাড়ছে। আর্থিক জালিয়াতি এবং অনলাইন হয়রানি এবং মানহানি পর্যন্ত করা হচ্ছে। এই সাইবার অপরাধ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, উস্কানিমূলক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং সাইবার অপরাধ, দুটো বিষয়ই সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে মানে নারী, শিশু, বয়স্ক এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের লক্ষ্যবস্তু করছে। কারণ, তাঁদের অনেকেই এটা প্রথমে বুঝতে বা উপলব্ধি করতে পারেন না। যখন বুঝতে পারেন, ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এই উসকানিমূলক কনটেন্ট, সাইবার অপরাধ সামাজিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে গভীর মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিক দুর্দশার মুখোমুখি করে।
তাই মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে লিখেছেন, সাইবার স্পেসে উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু তৈরি এবং প্রচার এবং অপরাধমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত কার্যকলাপ বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন দরকার। সেই সঙ্গে ডিজিটাল মিডিয়া সম্পর্কে আরও সচেতন করতে পর্যাপ্ত প্রচার করতে হবে। কনটেন্টের ভুয়ো কোনটা, সঠিক কোনটা সেই ব্যাপারে সব স্তরে প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে। ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার প্রসঙ্গে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন করতে হবে। যাতে কেউ যাচাই না করে কনটেন্ট আকর্ষণীয় দেখেই শেয়ার না করেন, সেটা নিশ্চিত করতেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিজিটাল সাক্ষরতার কর্মসূচি নিবিড়ভাবে গোটা দেশে করার উপরেও জোর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিশেষে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে লিখেছেন, নিরাপত্তা, সামাজিক সংহতি এবং আমাদের নাগরিকদের কল্যাণের জন্য এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিবেচনা করে, যদি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তবে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রতিবেদক : কিশোর সাহা