আমুদরিয়া নিউজ : আজ টেডি ডে। বহু প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে টেডি উপহার দেবেন। কিন্তু আপনারা যদি জানতে পারেন সেই টেডি গুলি সিগারেট দিয়ে তৈরি? নিশ্চিত, ঠাট্টা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু, না, সিগারেটের বাট থেকে টেডি তৈরিতে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে নয়ডা ব্রাদার্স। তাদের এই উদ্যোগের পেছনে কি কারণ রয়েছে, আসুন জেনে নিন।
সিগারেটের টুকরো হল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রচলিত বর্জ্যের মধ্যে একটি। এতে উপস্থিত ৪.৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে। এই সমস্যা সমাধান করতে নয়ডার দুই ভাই, নমন গুপ্ত ও বিপুল গুপ্ত একটি নতুন উপায় খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন।
যখন নমন বিকমের তৃতীয় বর্ষে পড়েন, তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে রাস্তাঘাট, পার্ক এবং যে কোনও স্থানেই সিগারেটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তিনি বুঝতে পারেন যে এটা কেবল দিল্লির সমস্যা নয় বরং পুরো দেশের সমস্যা। এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের কোন ব্যবস্থা ছিল না । তিনি বুঝতে পারেন যে এই সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।
২০১৮ সালে, এই দুই ভাই মিলে কোড এফোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, সিগারেটের টুকরো গুলিকে নতুন রূপ দিয়ে পরিবেশবান্ধব উপকরণে রূপান্তর করা। পরিবেশের ওপর এই উদ্যোগ যাতে ভাল প্রভাব ফেলে তার জন্য তারা দুজনই অনেক চেষ্টা করেছেন।
নয়ডা ব্রাদার্স দের প্রথম পদক্ষেপ
তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সিগারেটের টুকরো না জোগাড় করলে পুনর্ব্যবহার অসম্ভব হবে। তাই, তারা, সিগারেটের দোকান, অফিস, কারখানা থেকে বর্জ্য গুলি সংগ্রহ করতে ভি বিন তৈরি করেন। এই বিনগুলিতে শুধুমাত্র সিগারেটের টুকরো ফেলা হয়। এ ছাড়াও এগুলো জল ও অগ্নিরোধী, যার ফলে এগুলি নিরাপদ। ৭ বছরে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ লক্ষেরও বেশি ভি বিন বসানো হয়েছে।
ভি বিন থেকে পাওয়া সিগারেট গুলি সেক্টর ১৩৪ এ, সেই ভাইদের কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বর্জ্য গুলিকে তিনটি অংশে আলাদা করা হয়, ফাইবার( তুলোর মত উপাদান), কাগজের মোড়ক, তামাক এবং ছাই।
সেই তুলোর মত উপাদান গুলিকে জৈব-অজৈব রাসায়নিক মিশিয়ে শুকনো করা হয় এবং একটি নরম উপাদান তৈরি করা হয় যা দিয়ে সফট খেলনা এবং কুশন কভার তৈরি হয়।
অপচয় থেকে আবিষ্কার :
কোড এফোর্ট মূলত তিনটি জিনিস তৈরি করে। সফট খেলনা, উপহারের জিনিস ও কুশন। এই সফট খেলনা গুলোই ধীরে ধীরে ভীষণ পরিচিতি লাভ করে। এই খেলনা গুলি পরিবেশবান্ধব হওয়ার সাথে সাথে শিশুদের জন্যেও নিরাপদ।
সিগারেট গুলি কেটে সেখান থেকে তুলো বের করে তা রাসায়নিক মিশিয়ে শুকোতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। সবশেষে তুলো গুলিকে আরও নরম করে জিনিসগুলো বানানো হয়। প্রতিটি প্রক্রিয়া আলাদা আলাদা মেশিনের সাহায্যে হয়।
শুধু তাই নয়, তারা অবশিষ্ট তামাকের ছাই ও কাগজ গুলি গুঁড়ো করে, তারপর তাতে সার কারখানা থেকে আনা ব্যাকটেরিয়া ও জলীয় সার মিশিয়ে প্রাকৃতিক সার তৈরি করেন। সেই সার তারা নার্সারি গুলিতে সরবরাহ করেন।
গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান
নমন জানান, তারা দিল্লির এনসিআর এর স্থানীয় সরবরাহকারীদের থেকে সুতো, কাপড় সংগ্রহ করেন। তারপর সেগুলোকে নয়ডার নাংলি গ্রামের ১০০ জনেরও বেশি গ্রামীণ মহিলারা সেলাই করেন। কোম্পানি থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ছাড়াও তারা গ্রামের মহিলাদের জীবিকা দিতে উদ্যোগী।
৩৫ বছর বয়সী গৃহিণী, পুনম চৌহান বলেন, তিনি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাতের কাজ জানেন। কিন্তু এটা তার বাড়ির ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সালে নাংলি গ্রামে কোড এফোর্ট কোম্পানি আসার পর সব কিছু বদলে যায়। এই কোম্পানি তাকে কাজের সুযোগ করে দেয়। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০০০ টাকা অবধিও আয় করেন।
২৩ বছর বয়সী রজনী বলেন, তিনি গত তিন মাস ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করছেন। তার উপার্জন তার পরিবারকে ভীষণ সহায়তা করছে।
বর্জ্যের ভিন্ন ব্যবহার
নমন জানান, তারা সিগারেট থেকে পাওয়া তুলো গুলি পোশাকের কারখানায় সুতো তৈরির জন্যেও পাঠিয়ে থাকেন। তাদের স্টার্টআপের আইএসও ৯০০১, আইএসও ১৪০০১, আইএসও ৪৫০০১, জিআরএস সহ বহু সার্টিফিকেশন রয়েছে,যা সর্বোস্তরের নিরাপত্তা বজায় রাখতে জোর দেয়। কোম্পানির পণ্যগুলি এমজি মোটরস, রিলায়েন্স রিটেইল, নেস্টা টয়েসের মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ড গুলি ব্যবহার করে।
পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া
গত ৭ বছরে কোম্পানিটি ১০ বিলিয়নের বেশি সিগারেটের টুকরো সফল ভাবে পুনর্ব্যবহার করেছে। যার ফলে, ২৫০ বিলিয়ন জল দূষণ রোধ কমেছে এবং ৪০০ বিলিয়ন কার্বন থেকে জলবায়ুকে বাঁচানো গিয়েছে। কোম্পানিটি বিদেশি কমানো গুলির সাথেও যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পৃথিবীতে সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সর্বদা তৎপর নয়ডার এই দুই ভাই। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত দায়িত্ববোধ যাতে প্রতিটা মানুষের মধ্যেই তৈরি হয়, সেটাই তাদের মূল লক্ষ্য, এমনই জানান নমন ও বিপুল।
প্রতিবেদক : শিউলি ভট্টাচার্য