আমুদরিয়া নিউজ : এক কাপ কফি ও কিছু স্ন্যাকের সাথে জমজমাট আড্ডা মারা বা গল্প করার জন্য বহু ক্যাফে আমরা এমনিতেই যেতে ভালবাসি। কিন্তু আজ আমরা আমরা আপনাদের এমন ৫ টি ক্যাফের কথা বলব যেখানে গেলে আপনি গল্প করার চেয়ে বেশি সেখানে কাজ করা মানুষদের জীবনের কাহিনী শুনতে চাইবেন। তাঁরা যে যার জীবনের যুদ্ধে লড়াই করছেন। কেউ আছেন বিশেষ ভাবে প্রতিবন্ধী এইচ-আই-ভি পসিটিভ, কেউ আবার এলজিবিটিকিউ প্লাস সম্প্রদায়ের, কেউ রয়েছেন আদিবাসী উপজাতি গোষ্ঠীর যাদেরকে সমাজ পিছিয়ে পড়া শ্রেণিতে ফেলে, কেউ আবার জেল বন্দি যারা নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করছেন। জানুন তা হলে কোথায় রয়েছে সেই ক্যাফে গুলি আর কিই বা তাঁদের বিশেষত্ব।
১। ক্যাফে পজিটিভ, কলকাতা
কলকাতার ক্যাফে পজিটিভ হল ভারতের প্রথম ক্যাফে যা এইচআইভি-পজিটিভ কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা পরিচালিত। যারা সেই ভাইরাসের প্রতি এখনও সতর্ক থাকা সমাজে গভীরভাবে কলঙ্কিত। কিন্তু, তবুও তাঁরা সাহসের সাথে লড়াই করে চলেছেন। একটি গ্যারেজকে তাঁরা ক্যাফের রুপ দিয়েছেন। এখানে কেবল খাবারই পরিবেশন করা হয় না বরং সমাজ যাদের মেনে নিতে অস্বীকার করে কিংবা রোগের জন্য নিচু চোখে দেখে তাঁদের গ্রহণ করার বার্তা দেওয়া হয়। এখানে গেলে আপনি বুঝবেন আপনি শুধু ক্যাফেতে খাচ্ছেন না বরং সমাজের সাহসী মানুষদের লড়াইকেও সমর্থন করছেন।
ঠিকানা: ৬৪এ, লেক ভিউ রোড, বালিগঞ্জ, কলকাতা
২। ইকোস, দিল্লি
এই ক্যাফেতে কানে শুনতে পান না ও কথা বলতে পারেন না এমন ব্যক্তিরা কাজ করেন। তবে ভাববেন না যে তাঁরা আপনার কোনও কথাই বুঝবে না। অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে যে কারোর কোনও কথা বোঝার জন্য তাঁরা বিশেষ চিহ্ন আঁকা কার্ড ব্যবহার করেন। এই ক্যাফে আপনাকে এক নতুন ও সুন্দর অভিজ্ঞতা দেবে যা আপনার মনকে স্পর্শ করতে বাধ্য।
ঠিকানা: এইচএস-৬, ফার্স্ট ফ্লোর, কৈলাশ কলোনি মার্কেট, দিল্লি
৩। রাইটার্স ক্যাফে, চেন্নাই
রাইটার্স ক্যাফে কেবল বইপ্রেমী এবং খাদ্যপ্রেমীদের জন্য একটি আরামদায়ক জায়গা নয়। এনজিও পিসিভিসি-এর সহযোগিতায়, ক্যাফেটি অ্যাসিড অ্যাটাকের আক্রান্তদের নিয়োগ করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়। আর কেবল কাজই দেয় না বরং তাঁদের মর্যাদা, আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে। তাঁদের জীবনকে নতুন করে শুরু করার রাস্তা দেখায়।
ঠিকানা : ৯৮ পিটার্স রোড, গোপালপুরম, চেন্নাই,
৪। প্রাকৃতিক প্লাস্টিক ক্যাফে, গুজরাট
ক্যাফেতে যাওয়ার ইচ্ছা কিন্তু ভাবছেন যা খরচা হবে তত টাকা তো নেই? সমস্যা নেই। গুজরাটের প্রাকৃতিক ক্যাফে হল একটি প্লাস্টিক মুক্ত স্বর্গের মতো জায়গা যেখানে খাবারের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় জিনিস হল এর ভেতরের ভিউ ও শান্তি। ক্যাফেতে আসা মানুষরা তাঁদের সাধ্যমত যা ইচ্ছা দান করেন। খাবারের সাথে সাথে ক্যাফের দেওয়ালে আঁকা বিভিন্ন চিত্র মন খুলে দেখেন। আইএএস অফিসার ধাবল প্যাটেল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই ক্যাফেটি উপজাতীয় যুবকদের দ্বারা পরিচালিত।
ঠিকানা: জানানা হাসপাতাল, জুনাগড়, গুজরাট
৫। তিহার ফুড কোর্ট, দিল্লি
ভারতের বৃহত্তম কারাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে, তিহার ফুড কোর্টের প্রতিটি প্লেটে জেলে কাটানোর ও নিজেদের সংশোধনের কাহিনী লেখা রয়েছে। এখানে যারা নিজেদের সংশোধন করতে চান এমন বন্দিরা খাবার পরিবেশন করেন। এখানে, প্রতিটি খাবারই তাঁদের জন্য একটা দ্বিতীয় সুযোগ, যা প্রমাণ করে যে কারাগারে থাকা ব্যক্তিরাও পুষ্টিকর খাবার বানানোর সাথে সাথে মানবিকতা ও আতিথেয়তার সাথে সেগুলো পরিবেশনও করতে পারে।
ঠিকানা: তিহার জেল কমপ্লেক্স, জেল রোড, নয়াদিল্লি
তা হলে এবার নিশ্চয়ই আপনিও ভাবছেন যে এগুলোর মধ্যে যে কোনও একটাতে অন্তত একবার ঘুরে আসতে হবে। নিশ্চয়ই ঘুরে আসুন। এবার আর সুস্বাদু খাবার খেয়ে পেট আর মন না ভরিয়ে তাঁর সাথে জীবনে লড়াই করা মানুষদের কাহিনী শুনতে ক্যাফেতে যাওয়াকে সার্থক করে আসুন।