একঝলকে ডোনাল্ড ট্রাম্প
আমুদরিয়া নিউজ : ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংস্থা সমীক্ষা-টমীক্ষা করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়েছিল ‘নিকৃষ্টতম’ রাষ্ট্রপতির শিরোপা।
রাজনীতিতে মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র, উস্কানিমূলক মন্তব্য, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ-বিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা, মহিলাদের যৌন হয়রানির অভিযোগ সহ কত বিতর্ক তাঁকে নিয়ে। আমেরিকার ৪৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়েও কম অভিযোগ ওঠেনি। এত সব অভিযোগ সত্ত্বেও আমেরিকার সিংহভাগ ভোটার কিন্তু তাঁকে পের বেছে নিয়ে ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। হেরে গেলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস।
বাবার রিয়েল এস্ট্টের ব্যবসা, হাল ধরেন ট্রাম্প
নিউইয়র্কে জন্ম ট্রাম্পের। বাবার রিয়াল এস্টেটের ব্যবসা। ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। ১৯৭১ সালে বাবার ব্যবসার কর্ণধার হন।
তিনখানা বিয়ে, মোট ৫ ছেলেমেয়ের বাবা ট্রাম্প
১৯৭৭ সালে চেক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তাঁদের তিন সন্তান ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভানকা, এবং এরিক। অভিনেত্রী মারলা ম্যাপলসের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্কের কারণে ১৯৯০ সালে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন ট্রাম্প এবং ম্যাপলস। ৬ বছর পরে ফের ডিভোর্স হয় ট্রাম্পের। ট্রাম্প-ম্যাপলস-এর একমাত্র মেয়ে টিফানি মায়ের কাছে রয়েছে।
আবার ৬ বছরের মাথায় ২০০৫ সালে স্লোভেনীয় মডেল মেলানিয়া নাউসকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তাঁদের এক ছেলে ব্যারন। এখন মেলানিয়া আমেরিকার ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।
রিয়্যালিটি শো সঞ্চালনা, মিডিয়ায় বিনিয়োগ
নব্বই-এর দশকে ট্রাম্পের ব্যঠবসায় অনেক ক্ষতি হয়। ট্রাম্প সাইড ভেঞ্চার চালু করেন। বেশির ভাগই নিজের নামে লাইসেন্স করে। ২০০৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রযোজনা ও সঞ্চালনা করেন রিয়্যালিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’। মিডিয়ার সঙ্গেও যুক্ত হন এই ধনকুবের।
হোয়াইট হাউসের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু ২০১৫ সালে, তা অব্যাহত
২০১৫ সালে একজন রিপাবলিকান হিসেবে শুরু করেন রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে জয়ী হন ট্রাম্প। তাঁর বহু মন্তব্য এবং কার্যকলাপ ও নীতি দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে অসংখ্য প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প। আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে একটি প্রাচীর নির্মাণের জন্য সামরিক তহবিল তছরুপে নাম জড়িয়েছে তাঁর। পারিবারিক বিচ্ছেদ নীতির বাস্তবায়ন করেছিলেন তিনি। কোভিডের মহামারী তাঁর ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ওই অসময়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সুপারিশের বিরোধিতা করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে চিকিৎসা সম্পর্কে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
শতাধিক পরিবেশ আইন ফিরিয়েছেন
এত কিছুর মধ্যেও শতাধিক পরিবেশ নীতি সংক্রান্ত আইন ফিরিয়ে আনেন তুখোড় এই রাজনিতিবিদ। ২০১৭ সালে ট্যাক্স কাট এবং জবস অ্যাক্টে সই করেন, যা কর কমিয়ে জরিমানা দূর করে। তিনি নিল গোরসুচ, ব্রেট কাভানাফ এবং অ্যামি কোনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করেন।
চিনকে কোণঠাসা করতে অগ্রণী ভূমিকাও ট্রাম্পের
প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে চিনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন। প্রস্তাবিত ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিম জং উনের সাথে তিনবার দেখা করেছেন তিনি। তবুও উত্তর কোরিয়ায় ভবি বদলাতে পারেননি।
যৌন নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে
অভিযোগ, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়া। ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েও তা মানতে চাননি ট্রাম্প। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ করেন তিনি। ২০১৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট তিনিই। এমন কি বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের খাতিরে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করা হয় ট্রাম্পকে। পরবর্তীতে অবশ্য তাঁকে বেকসুর খালাস করা হয় তাঁকে। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে যৌন নির্যাতন এবং মানহানি ও আর্থিক জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। কোনও অভিযোগ কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয়নি। এবারের ভোটের সময়ে এক সুইস মডেল অভিযোগ করেছেন তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন ট্রাম্প। যা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়েছে ট্রাম্প শিবির।