আমুদরিয়া নিউজ : নাম শুনলেই ছোটবেলায় ছবিতে দেখা ভূতের চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটু গা ছমছম ভাব হয় সকলেরই। তো ভূতচতুর্দশী আসলে কি! গুগলে সার্চ করলেই সব পাবেন। অনেক লেখা আছে।
সে সব থেকেই কিছু সংগ্রহ করে আপনাদের জানাই।
ক্যালেন্ডার অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষে ফি বছর পালিত হয় চতুর্দশী তিথি। কালীপুজোর সঙ্গে এই ভূত চতুর্দশীর সম্পর্ক গভীর। কালীপুজোর ঠিক আগের রাতে পালিত হয় বাঙালির ভূত চতুর্দশী। অনেকে বলেন নরক চতুর্দশী।
কারণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে এই তিথিটি নরক চতুর্দশী নামে পরিচিত। কখনও কখনও আবার একই দিনে পালিত হয় দুটি উৎসব।
ভূত চতুর্দশী হল মূলত হিন্দুদের উৎসব। দীপাবলির পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এটি হিন্দু পঞ্জিকার কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দিনটিতে চোদ্দ শাক খাওয়া এবং চোদ্দ প্রদীপ প্রজ্বালানো হয়।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই দিটিতে কৃষ্ণ ও সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। মৃত্যুর দেবতা যমকেও এই দিনে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করা হয়ে থাকে। বাড়ির আনাচ-কানাচ সাফসুতরো করে ফুল এবং বিভিন্ন রকমের রঙ্গোলি বা আলপনা আঁকা হয়৷
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দৈত্যরাজ বলি স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করলে অসুররা সবার উপর অত্যাচার শুরু করে। বলিকে থামানোর জন্য ভগবান বিষ্ণু বামন অবতারে বলির কাছে তিন পা জমি দিতে অনুরোধ করলেন। দৈত্যরাজ তা দিতে রাজি হলেন। বামন অবতার দুই পা স্বর্গ ও মর্ত্যে দিলেন। এরপর নাভি থেকে বের হওয়া তৃতীয় পা বলির মাথায় দিয়ে তাকে পাতালে পাঠিয়ে দিলেন। নিজের কথা রাখায় ও তাঁকে চিনেও দান করতে রাজি হওয়ায় বামনরূপী বিষ্ণু বলিকে প্রতি বছর পৃথিবীতে পুজো পাবে বলে আশীর্বাদ করলেন। এরপর থেকে কালীপুজোর আগের রাতে রাজা বলি পাতাল থেকে পৃথিবীতে পুজো নিতে আসেন। তার সাথে সহস্র ভূত, প্রেতাত্মা এবং অশরীরী এ সময় আসে। নরকাসুর নামে এক রাক্ষস ছিল এবং সে পৃথিবীতে মানুষের উপর অত্যাচার করছিল। তিনি ১৬০০০ গোপীকে বন্দি করেছিলেন। তারা সকলেই ভগবান কৃষ্ণের কাছে তাদের সাহায্য করার জন্য এবং রাক্ষসকে হত্যা করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। নরকাসুর ব্রহ্মার কাছ থেকে একটি বর পেয়েছিলেন যে তিনি কেবল তাঁর মায়ের দ্বারাই নিহত হতে পারেন। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্ত্রী সত্যভামা সহ সমস্ত মেয়েদের উদ্ধার করতে যান। কারণ সত্যভামা পূর্বজন্মে তাঁর মা ছিলেন। চতুর্দশীর এই দিন তারা রাক্ষসকে বধ করে সবাইকে রক্ষা করেছিলেন।
অন্য মতে, চামুণ্ডা রূপে মা কালী এ দিন চৌদ্দখানা ভূতকে সাথে নিয়ে ভক্তের বাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে দূর করতে পৃথিবীতে আসেন।
ভূত চতুর্দশী অনুষ্ঠান সারা ভারত উপমহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন উপায়ে পালন করা হয়। এই দিন ভারতের কিছু স্থানে, হনুমানকে নারকেলের বিশেষ নৈবেদ্য সহ চালের গুড়, গুড়, ঘি এবং তিলের বীজ দিয়ে পুজো করা হয়। মাসের তাজা ফসল থেকে ধান পাওয়া যায়। বিশেষ ফুল, তেল। এবং চন্দন ব্যবহার করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।সন্ধ্যায় গৃহে তেলের বাতি জ্বালানো হয়।
বাংলার ঋতু বৈচিত্র অন্য প্রদেশের থেকে বেশি। আশ্বিন ও কার্তিক মাস দুটিকে যমদংস্ট্রা কাল বলা হত। এই সময় ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু, হিঞ্চে, শুষুনী, শেলু এই চোদ্দটি শাক একত্রে খাওয়া হয়। আয়ুর্বেদ মতে ১৪ শাক হলো পালং, লাল, সুষণি, কুমড়ো, পাট, মেথি, ধনে, পুঁই, নোটে, মূলো, কলমি, গিমে, সরষে, লাউ অথবা হিঞ্চে।
এ সময়ে শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত ছুঁয়ে শীত পড়ে। ঋতু পরিবর্তনের এই মরশুমে এই শাক খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে বলে মনে করা হয়। বলা হয়, , এই দিন গঙ্গাস্নান করলে মৃত্যুর পর আর নরকে যেতে হয় না এরকম পৌরাণিক নিয়ম রয়েছে।
ধর্মরাজ, মৃত্যু, অন্তক, বৈবস্বত, সর্বভূতক্ষয়, যম, দম্ন, নীন, পরমেষ্ঠী, বৃকোদর, চিত্রগুপ্ত, উড়ুম্বর- ১৪ জন যমরাজের উদ্দেশ্যে তর্পন করার রীতি রয়েছে। ভূত, পিশাচ, প্রেত থেকে বাঁচতে ও অশুভ শক্তিকে তাড়াতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
চতুর্দশীর ঠিক পরের দিনেই তো অমাবস্যা। মহাঘোরা যামে শুরু হবে দেবী কালীর আরাধনা। উৎসবের সেই পরম মুহূর্তের প্রস্তুতিপর্বে নিজেকে শুদ্ধ না রাখলে চলে! চতুর্দশীর চোদ্দ প্রদীপে তো সেই আমাদের সকলের প্রিয় আলোর দেবী দেবীর আবাহনে নিজেরা যতটা সম্ভব আলোকিত হয়ে ওঠার চেষ্টা করা।
প্রতিবেদক : বর্ণা ভট্টাচার্য